,

হবিগঞ্জে ফরমালিন যুক্ত ফলমূলে বাজার সয়লাব

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি ॥ বিষাক্ত রাসায়নিক মেশানো মৌসুমী ফল দেদারসে বিক্রি হচ্ছে হবিগঞ্জের আট উপজেলার হাটবাজারে। আর এসব ফল খেয়ে প্রতিদিনই মানুষ অসুস্থ হচ্ছেন। গত সপ্তাহে মৌসুমী ফল আম, লিচু, কাঁঠাল ইত্যাদি খেয়ে অন্তত ১৫ জনের অসুস্থ হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। প্রায়ই পত্রিকা অফিসে ফোন করে লোকজন অসুস্থতার খবর জানাচ্ছেন। পাশাপাশি বাজারে রাসায়নিক মেশানো বিষাক্ত ফল বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে ভূক্তভোগীরা প্রশাসনের সহযোগিতাও কামনা করেছেন। সে অনুযায়ী জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ভেজালবিরোধী আইনের আওতায় অভিযানও পরিচালিত হয়েছে। জরিমানাসহ শাস্তিও দেয়া হয়েছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন- বিষাক্ত রাসায়নিক মেশানো এ সকল ফল মানবদেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। বিশেষ করে শিশুদের জন্য খুবই বিপজ্জনক। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন- প্রচন্ড গরমে ফরমালিন মেশানো ফল খেয়ে মানুষের মৃত্যুও হতে পারে। এতোকিছুর পরও বিএসটিআই এ ব্যাপারে কোনো কার্যকর ভূমিকা গ্রহণ না করায় মানুষের মাঝে হতাশা বিরাজ করছে। মোবাইল টিম অভিযান চালিয়ে বাজারের ফরমালিনযুক্ত ফল উদ্ধার করে মানুষের জীবন বাঁচাতে পারে বলে সংশ্লিষ্টদের অভিমত। মাঝে-মধ্যে জেলার বিভিন্ন উপজেলার হাটবাজারে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হলেও তা আইওয়াশ বলে অভিহিত করছেন অনেকে। শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা বলেছেন, বিষাক্ত রাসায়নিক মেশানো এসব ফল খাওয়া আর বিষ খাওয়ার মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। এসব ফল খেলে ক্যান্সার হতে পারে, কিডনি ও লিভারে জটিল রোগ বাসা বাঁধতে পারে। শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা: জমির আলী জানান, ফরমালিনযুক্ত ফল খেলে মানুষের কিডনির নানা রোগ হতে পারে। এতে ক্যান্সারের আশংকাও বেড়ে যায়। লিভার প্রদাহ ও স্নায়ুরোগ হতে পারে। শিশুরা এসব ফল খেলে র‌্যানালটি নামক রোগ হতে পারে। তিনি বলেন- ফরমালিন থেকে মুক্তি পেতে হলে ফল কিনে এনে একটি পাত্রে পানি ঢেলে তাতে ভিনেগার বা শিরকা মিশিয়ে ৩০ মিনিট ডুবিয়ে রাখলে ফরমালিনের ক্রিয়া অনেকটা নষ্ট হয়ে যায়। এরপর ফল খেলে কোনো রোগ হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তিনি জানান- আমাদের নৈতিক অবক্ষয় রোধ করলে এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থা যথাযথভাবে আইন প্রয়োগ করলে এটা থেকে পরিত্রাণ সম্ভব হতে পারে। ক্রেতা সেজে বাহুবল উপজেলার ফল ব্যবসায়ী উস্তার মিয়ার সাথে কথা বললে তিনি কিছুটা রাগের সাথে বলেন, এগুলো দেখার দায়িত্ব আমাদের নয়। যাদের কাছ থেকে আমরা পাইকারি দামে কিনে আনি তারা ভালো জানে। জানা গেছে, অসাধু ও মুনাফালোভী ব্যবসায়ী, আড়তদার এবং ফড়িয়ারা গাছে মুকুল আসার পর থেকে ফল পেড়ে আনার পূর্ব পর্যন্ত ভারতীয় বিষ ইতোফেন গ্র“পের বাইজার, হারবেস্ট, প্রমাড ও ক্রমপ্লেমেক্স, ম্যালাথান গ্র“পের কীটনাশক কট, টিভো, ফাইটার, ম্যানকোজের গ্র“পের ভায়াথেন অথবা কার্বন্ডাজিন গ্র“পের নইন পাউডার, এনটাকল, ব্যাপিস্টিন, ফোরা ও ইন্টারফলসহ ১৬ প্রকার কীটনাশক মেশায়। এরপর ফলের পচন রোধ করতে ও টাটকা রাখতে ফরমালিন মেশানো হয়। এরপর ফলের পচন রোধ করতে ও টাটকা রাখতে ফরমালিন মেশানো হয়। কথা হয় জনৈক ক্রেতা ও শায়েস্তানগরের ব্যবসায়ী আব্দুস শহিদ মিয়ার সাথে। তিনি জানান, ফলে বিষাক্ত রাসায়নিক মেশালেও তার কোনো প্রতিকার নেই। তাই এসব ফল খাওয়া থেকে বিরত থাকা ছাড়া কোনো উপায় নেই। ফরমালিনের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না দেশের জাতীয় ফল কাঁঠালও। বিষাক্ত ক্যামিকেল ও ফরমালিন মিশ্রিত পানিতে চুবিয়ে কাঁঠাল বিক্রি করা হচ্ছে। অন্যান্য ফলে ফরমালিন মেশানো হলেও কাঁঠাল এতোদিন ছিল মুক্ত। সম্প্রতি কাঁঠালেও ফরমালিন মেশানোর কারণে ক্রেতারা হতাশায় ভোগছেন। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, ফরমালিন মেশানোর কারণে কাঁঠাল অনেকদিন রেখে বিক্রি করা যায়। লাভও বেশি। ফল থাকে টাটকা। তবে সেই স্বাদ আর পাওয়া যায় না। বাজারে বিভিন্ন প্রকার ফরমালিনযুক্ত আম প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে। আম পাকাতে বিষাক্ত সকল রাসায়নিক ব্যবহার করে আড়তদাররা লাভবান হচ্ছে। কারণ আমে পচন ধরছে না। বেশিদিন রেখে বিক্রি করা যাচ্ছে। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রায় সকল আমই ফরমালিনমিশ্রিত। ব্যবসায়ীরা ফরমালিনের বিষয় জেনেও তা বিক্রি করছেন। অনেকে কিনে নিচ্ছেন আম। হবিগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা: দেবপ্রদ রায় জানান- বর্তমান অবস্থাটা এমন যে, যেখানেই হানা দেয়া যায়, সেখানেই ফরমালিন। ফরমালিনযুক্ত ফল খেলে ক্যান্সারসহ সব ধরণের রোগ হতে পারে। সুপার শপ থেকে শুরু করে ফুটপাত ব্যবসায়ী সকলেই ফরমালিন মেশানো ফল বিক্রি করছেন। তিনি জানান- ফরমালিন প্রতিরোধে বিএসটিআইসহ সবাইকে ভূমিকা নিতে হবে। সর্বোপরী ফল খাওয়ার ক্ষেত্রে সচেতনতাও প্রয়োজন বলে তিনি মন্তব্য করেন। তিনি বলেন- আমরা ফল ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলেছি তারা জানিয়েছে, রাজশাহীসহ যেসব এলাকা থেকে ফল আসে সেখানেই ফরমালিন মেশানো হয়।


     এই বিভাগের আরো খবর